সরকারি নথি অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষ্য হচ্ছে শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন এবং তাদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নবগঠিত বিছনাকান্দি ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেষা জনপদের ১৩ নং দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে তা যেন অকার্যকর। এতে করে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম।
শিক্ষক সংকট নিরসনের আবেদন করা হলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষক সংকট দূর করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিতের দাবি অভিভাবকসহ স্থানীয় সচেতন মহলের।
সোমবার বেলা ৩টায় বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখাযায়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে শিক্ষক থাকলেও পঞ্চম শ্রেণীতে কোন শিক্ষক নেই।
শিক্ষক নেই কেন জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের স্কুলে স্যার ও ম্যাডাম মাত্র দুইজন, এজন্য আমাদের ক্লাসে স্যার নেই।
এ সময় আরও জানাযায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত সমস্যা না থাকলেও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষাদান করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানান বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: সাদিকুর রহমান জানান, উপজেলার অজ পাড়া-গাঁয়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি অবস্থিত হলেও পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক মণ্ডলী ও অভিভাবকদের আন্তরিকতার কারণে অত্র বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ভাল। প্রায় আড়াইশো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করে।
বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ে মাত্র ৩ জন শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন।
এরমধ্যে একজন শিক্ষক মাতৃকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বর্তমানে ২ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে আমাদের খুবই কষ্ট করতে হয়। প্রতি শিফটে একসাথে তিনটি করে ক্লাস থাকলেও ২ জন শিক্ষক দিয়ে এত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো কষ্টসাধ্য। আমরা বার বার শিক্ষা অফিসে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন নিবেদন করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবেদা আক্তার জানান, আমাদের ক্লাসে প্রায় সময় স্যার থাকেন না, স্যাররা অন্য ক্লাসে ক্লাস নেন। প্রতিদিন আমাদের ৬ টি বিষয়ের উপর ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও স্যাররা তিন-চাঁরটার উপরে ক্লাস নিতে পারেন না। এতে করে আমাদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
অপর আরকে শিক্ষার্থী আক্ষেপের সাথে বলেন, সামনেই আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা, কিন্তু এখনো আমাদের বইয়ের পড়া শেষ হয়নি। পড়া শেষ না হলে আমরা কিভাবে পরীক্ষা দিব?
অভিভাবক শাহাবউদ্দিন বলেন, সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাস চলে। ১২টা থেকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস চলমান থাকে। এক সাথে তিনটি শ্রেণিকক্ষ চলমান থাকলে দুজন শিক্ষক কিভাবে ক্লাস করান? শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে, এর দায়ভার কে নিবে? আমাদের কোমলমতি সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাহিদা মত শিক্ষক দেওয়ার জন্য শিক্ষা অফিসের প্রতি আহ্বান জানাই।
গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য ও দমদমা গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক হারুন অর রশিদ বলেন, শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক, ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধক, বিজ্ঞানমনষ্কতা, সৃজনশীল ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকর থাকায় তা বাস্তবায়ন করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। কোন শিক্ষকের পক্ষে এক টানা ক্লাস নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়, এর মধ্যে আবার এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে দৌড়াদৌড়ি করে পাঠদান করানো। অত্র এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা উচিত বলে আমি মনে করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমরা অবগত। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ ও সীমান্তে স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় কোন শিক্ষকই সেখানে যেতে রাজি হচ্ছে না। বিদ্যালয়টির চাহিদা মত শিগগিরই শিক্ষক নিয়োগ দিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।