
এম,এ,মতিন, গোয়াইনঘাটঃ সদ্য প্রকাশিত এসএসসি/ দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় এবার ফলাফল চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও সচেতন মহল। এমন বিপর্যয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের অবাধে স্মার্টফোন ব্যবহার, অভিভাবকদের উদাসীনতা ও শিক্ষকদের দায়সারা মনোভাবকেই দুষছেন সচেতন মহল। জানা যায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায়
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গড় পাসের হার মাত্র ৭০.০১ শতাংশ। উপজেলার ৩১ টি হাই স্কুলের মোট ৩১৩২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ২৪১২ জন। ফেল করেছে ৭২০ জন৷ জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৮৬ জন শিক্ষার্থী । অপর দিকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩০৩ জন শিক্ষার্থী এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৯৩ জন শিক্ষার্থী। দাখিলে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৯ টি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনও জিপিএ ৫ পাননি। দাখিলে পাশের হার ৬৩.৭০ শতাংশ। এ বছর গড় পাসের হারে উপজেলায় সবচেয়ে ভালো ফল করেছে রুস্তুমপুর ইউনিয়নের লামনী প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ১৯ শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে সকলেই কৃতকার্য হয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩১টি হাইস্কুলের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের জলুরমুখ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন ১১ জন শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্টানের পাশের হার ৪৪ শতাংশ। এবছরের এসএসসির ফলাফলে দ্বিতীয় খারাপ অবস্থানে রয়েছে
গোয়াইনঘাট উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীণতম বিদ্যাপীঠ ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্টান থেকে ১৫৯ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন মাত্র ৭৩ জন। এ প্রতিষ্টানে পাশের হার ৪৫..৯১ শতাংশ। এসএসসির ফলাফলে তৃতীয় খারাপ অবস্থানে রয়েছে তোয়াকুল ইউনিয়নের পূর্ব তোয়াকুল উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্টান থেকে ৪৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। অপর দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৯ টি মাদরাসা থেকে এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩০৩ জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন মাত্র ১৯৩ জন। দাখিল পরীক্ষায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় পাশের হার দাঁড়ায় ৬৩.৭০ শতাংশ। এবারের দাখিল পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে উপজেলার বাউরবাগ হাওর আলিম মাদরাসা। এ প্রতিষ্টান থেকে ৩৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ কৃতকার্য হয়েছেন। এ মাদরাসায় পাশের হার ৪৪.৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় ফলাফল বিপর্যয়ে রয়েছে নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসা। এ মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮৬ জন শিক্ষার্থী এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৭ জন। আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসায় পাশের হার দাঁড়ায় ৫৪.৬৫ শতাংশ। দাখিল পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম গোয়াইনঘাট আদর্শ দাখিল মাদরাসা। এ প্রতিষ্টান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২০ জন শিক্ষার্থী এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন ১১ জন। এ প্রতিষ্টানে পাশের হার ৫৫ শতাংশ। এবারের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে গোয়াইনঘাট উপজেলার সচেতন মহল ক্ষুব্ধ। উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন যেসকল প্রতিষ্টানে এবারের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে তার অন্যতম প্রদান কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের পাঠদানের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আর কয়েকজন স্কুলে ক্লাস নেওয়া থেকে প্রাইভেট বাণিজ্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করেন।আর কিছু খন্ডকালিন শিক্ষকের দাপটের কারণে ফলাফল বিপর্যয় ।’একজন অভিভাবক এ প্রতিনিধি কে বলেন, গোয়াইনঘাটের প্রথম হাইস্কুল বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় ও জলুরমুখ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয় অপ্রত্যাশিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চেয়ে কোচিং কিংবা প্রাইভেটে বেশি আগ্রহের বিষয়টা ফল বিপর্যয়ের একটা কারণ। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির মনিটরিংয়ের অভাবও ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। খন্ডকালিন নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষক ও ছেলেমেয়েদের মোবাইলে আসক্তিও আংশিক দায়ি।