
নিজস্ব প্রতিবেদক,গোয়াইনঘাটঃ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় নানা আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। সকাল ১০ টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গনে বীরমুক্তি যোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হয়।
সকাল ১১ টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফিয়া বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ভুমি তানভীর হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইউনুস মিয়া, গোয়াইনঘাট থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মেহেদী হাসান, গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবু কাওছার, শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জামাল খান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, ১৯৪৯ সালের এই দিনে বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি জাতির জনকের হত্যাকারী ঘৃণ্য শত্রুদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল ঢাকার শহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাস করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্রও ছিলেন শেখ কামাল। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চনাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে শেখ কামাল ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন’ শিল্পী গোষ্ঠী।
এ ছাড়া তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। অভিনেতা হিসেবেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তিনি উপমহাদেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন ও আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা। শহীদ শেখ কামাল আমৃত্যু আমাদের দেশের নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়াও অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে তাঁর অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী ও আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে পুনরায় লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।
তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণের সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অন্যাদের মধ্যে বীরমুক্তি যোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের পক্ষে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফিয়া বেগম, গোয়াইনঘাট সার্কেল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, গোয়াইনঘাট থানা থেকে ইন্সপেক্টর তদন্ত মেহেদী হাসান,বীরমুক্তি যোদ্ধা গনের পক্ষ থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক।উপজেলা আওয়ামী লীগ,যুবলীগ,তাতীলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগ,অফিসার্স ক্লাব সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের দায়িত্বশীলেরা।